প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময়ই সাহাবাদের নসিহত করতেন। মূল্যবান এসব উপদেশ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো মানব জীবনের পরম পাথেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মূল্যবান সে সব উপদেশ থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
হজরত আমর ইবনে মায়মুন (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশস্বরূপ বললেন, পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি কাজ করাকে বড় নিয়ামত মনে করবে। সেগুলো হলো- ১. বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে, ২. রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, ৩. অভাবগ্রস্থ হওয়ার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে, ৪. ব্যস্ততা শুরু হওয়ার পূর্বে অবসর এবং অবকাশকে আর ৫. মৃত্যু আসার পূর্বে জীবন বা আয়ুকে। -সুনানে তিরমিজি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কে এ কয়েকটি বিধান আমার নিকট হতে গ্রহণ করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে? বা এরূপ লোককে শিখিয়ে দেবে যে তদনুরূপ আমল করে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি গ্রহণ করবো। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে পাঁচটি সংখ্যা গননা করালেন। তিনি বললেন- ১. আল্লাহতায়ালা যা কিছু নিষিদ্ধ করেছেন তা হতে বিরত থাক। এতে তুমি উত্তম ইবাদতকারী হবে। ২. আল্লাহতায়ালা তোমার নসিবে যা কিছু বণ্টন করে দিয়েছেন, তাতেই খুশি থাকবে। এতে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় ধনী হবে। ৩. তোমার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করবে, এতে তুমি পূর্ণ ঈমানদার হবে। ৪. নিজের জন্য যা পছন্দ কর, মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে। এতে তুমি প্রকৃত মুসলমান হবে এবং ৫. বেশি হাসবে না। কেননা বেশি হাসলে অন্তর মরে যায়।’ -মুসনাদে আহমদ ও তিরমিজি
ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত দিবসে মানুষের দু’পা এতটুকু বাড়তে পারবে না, যে পর্যন্ত না তার কাছ থেকে পাঁচটি বিষয়ের জবাব চাওয়া হবে। বিষয়গুলো হলো- ১. তার বয়স সম্পর্কে। সে তার বয়স কোন কাজে ব্যয় করেছে। ২. তার যৌবন সম্পর্কে। সে তার যৌবনকে কোন কাজে লাগিয়েছে। ৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে। সে তার ধন-সম্পদ কিভাবে আর কোথা হতে অর্জন করেছে। ৪. তার ধন-সম্পদ কোথায় ও কিভাবে ব্যয় করেছে। ৫. ইলম (জ্ঞান) সম্পর্কে। যে পরিমাণ ইলম বা জ্ঞান সে অর্জন করেছে, তদনুযায়ী আমল করেছে কিনা। -সুনানে তিরমিজি
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, স্বাস্থ্য (সুস্থতা) এবং অবকাশ এ দু’টি মূল্যবান সম্পদের সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে অধিকাংশ লোক বিভ্রান্তিতে রয়েছে। -সহিহ বোখারি
অর্থাৎ এ দু’টি এমন মূল্যবান সম্পদ; যা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর তার মর্যাদা মানুষ বুঝতে পারে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে নিয়ামত সম্পর্কে বান্দার নিকট সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তা হলো, আমি কি তোমাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দান করিনি? আমি কি তোমাকে শীতল পানি দিয়ে পরিতৃপ্ত করিনি? –তিরমিজি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুনিয়া মুমিনদের জন্য কারাগার এবং কাফেরদের জন্য স্বর্গভূমি। -সহিহ মুসলিম
লেখক: খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা